News update
  • Global Leaders Pay Tribute as Condolences Pour In for Khaleda Zia     |     
  • Govt Declares 3-Day Mourning, Wednesday Holiday for Khaleda Zia     |     
  • Khaleda Zia: Icon of Bangladesh’s Democracy and Leadership     |     
  • Over 1 Million Voters Register for Postal Ballots in Bangladesh     |     
  • Begum Khaleda Zia, Uncompromising Leader of Bangladesh, Dies     |     

একুশ বরণে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার 

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2024-02-20, 9:24pm

reryey-20cbc2f1359d8771fd67658bcdd086721708442722.jpg




ভাষা কেবল ভাব প্রকাশের বাহনই নয়, একটা জাতির অস্তিত্ব আর আত্মপরিচয়েরও বাহক। সেই আত্মপরিচয়ই বাঙালির কাছ থেকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল পাকিস্তানের শোষক সরকার। বাংলার জমিনে বুনে দিতে চেয়েছিল উর্দু ভাষার বীজ। কিন্তু মেনে নেয়নি বাংলার বীর সন্তানরা।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় সেদিন সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বাররা অকাতরে ঢেলে দিয়েছিলেন বুকের তাজা রক্ত। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের পুলিশের অস্ত্রের মুখে ভয়ডরহীন দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন নাম না জানা আরও অনেকে। জীবন দিয়ে রক্ষা করেছিলেন প্রাণের বাংলা ভাষার মর্যাদা।

ফেব্রুয়ারি এলেই বাঙালির জীবনে ফিরে ফিরে আসে ’৫২-এর সেই ভাষা আন্দোলন আর একুশের মিছিলে বাংলার অকুতোভয় সৈনিকদের মহান আত্মদানের স্মৃতি। একুশের প্রথম প্রহর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভাষা শহীদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। ভোরে প্রভাতফেরী থেকে শুরু করে দিনব্যাপী বিভিন্ন আয়োজনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার হয় প্রাণের বাংলা ভাষার অধিকারের জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের।

এরই ধারাবাহিকতায় বাঙালি জাতি ও বিশ্ববাসীর সামনে হাজির আরেকটি ২১ ফেব্রুয়ারি। জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা মহান এই দিনটিকে বরণ করে নিতে ইতোমধ্যে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। যথাযথ ও সুশৃঙ্খলভাবে দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে শহীদ মিনার ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

শিল্পীদের আঁকা আলপনায় সেজেছে মিনারের মূল বেদি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমে জগন্নাথ হলের দিক থেকে আসা রাস্তার দুপাশের দেয়ালও রেঙেছে রং-তুলির আঁচড়ে। জাদুকরি হাতের ছোঁয়ায় সেখানে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে একুশ স্মরণে বিভিন্ন গান আর কবিতার লাইন।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শহীদ মিনার ঘুরে দেখা মেলে এমন চিত্রের।

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাদেই মহান একুশের প্রথম প্রহর। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রথম প্রহর থেকেই শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমবেত হবে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রতিবারের মতো এবারও শহীদ মিনার এলাকা রাঙানোর কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

শহীদ মিনারের উত্তর পাশের দেয়ালের প্রতিটি ব্লকে লেখা হয়েছে বিভিন্ন লেখকের কবিতা ও উক্তি।

দেয়ালে লেখা হয়েছে কবি জসীম উদ্দীনের কবিতার অংশ- ‘এ ভাষারি মান রাখিতে/হয় যদিবা জীবন দিতে/চার কোটি ভাই রক্ত দিয়ে/পুরাবে এর মনের আশা।’

লেখা হয়েছে মীর মশাররফ হোসেনের উক্তি, ‘মাতৃভাষায় যাহার শ্রদ্ধা নাই, সে মানুষ নহে।’ আবুল ফজলের ‘একুশ মানে মাথা নত না করা।’

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কবিতার অংশ- ‘মাগো ওরা বলে/সবার কথা কেড়ে নেবে/তোমার কোলে শুয়ে/ গল্প শুনতে দেবে না/ বলো মা তাই কি হয়?’

এর পাশেই আঁকা হয়েছে ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সময়ের চিত্র। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানরত আন্দোলনকারীদের প্রতিচ্ছবি। ‘উর্দু নয় বাংলা’, ‘অ আ ক খ’ প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিলে গলা ফাটানো তরুণ-তরুণীদের ছবি, মৃত কিশোরের মরদেহ কোলে মায়ের চিত্র।

সড়কের অন্য পাশের দেয়ালে লাল রঙে লেখা হয়েছে জাতীয় সংগীতের প্রথম লাইন ‘আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি।’ সঙ্গে আঁকা হয়েছে টেপা পুতুলের আদলে ঘোড়া, মাছ, পাখি, ময়ূর খরগোশ, নৌকাসহ বাংলার বিভিন্ন চিত্র।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নেসার হোসেন বলেন, একুশ বরণে এবার আমাদের শতাধিক সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী আঁকাআঁকিতে অংশ নিয়েছেন। রাঙানো হয়েছে রাস্তার পাশের ফুটপাতের সাদাকালো ব্লকগুলোও।

সরকারপ্রধান হিসেবে এবার ২১তম বারের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষা শহীদদের প্রতি তার এই ২১টি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের দূর্লভ ছবি দিয়ে শহীদ মিনারের দক্ষিণ পাশের প্রবেশমুখে প্রদর্শনী করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সে আয়োজনের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টায় শহীদ মিনার প্রস্তুতির সার্বিক অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আগের বছরগুলোয় আমাদের কোথায় ভুল ছিল, কোথায় গ্যাপ ছিল, সেগুলো বিশ্লেষণ করে এবার তা কমানোর চেষ্টা করেছি। পুরো অনুষ্ঠান যেন ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হয়, সে ব্যবস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বক্তৃতায় বাংলা ভাষার প্রতি অনুরক্ততা প্রকাশ করে যে কথা বলেছিলেন, তার ছবিসহ সে উক্তিও আমরা এখানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছি, যাতে তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস জানতে পারে।

একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে যাতায়াতের রুটম্যাপ

একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের গেট থেকে ফুলার রোড মোড়, টিএসসির সড়কদ্বীপ থেকে বকশীবাজার সড়ক, কাজী মোতাহার হোসেন থেকে শহীদ মিনারের সড়ক এবং দোয়েল চত্বর থেকে চানখারপুল পর্যন্ত সড়ক বন্ধ থাকবে।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সেখান থেকে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা হয়ে দোয়েল চত্বর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রাস্তা দিয়ে চানখারপুল হয়ে প্রস্থান করা যাবে। শহীদ মিনারের দিকে আসা যাবে না।

এ ছাড়া শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জনসাধারণকে হোম ইকোনোমিকস মোড় দিয়ে আজিমপুর কবরস্থানের উত্তর গেটের দিকে গিয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পর দক্ষিণ গেট দিয়ে ইডেন মোড় হয়ে বের হতে বলা হয়েছে।

চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এ বছর শহীদ মিনারে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শহীদ মিনার এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল টিম, সোয়াত টিম, ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিমমহ অন্যান্য টিম নিরাপদ দূরত্বে প্রস্তুত থাকবে। শহীদ মিনার এলাকায় সার্বক্ষণিক তল্লাশি ব্যবস্থা এবং পেট্রলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ড্রোন পেট্রলিং, মোবাইল পেট্রলিং এবং সাইবার পেট্রলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।